সন্তানদের ছবি ও স্মৃতিচারণ নিয়ে এখনও মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা- মা: বজ্রপাতে নিহত নাবিলের ১মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
গোলাম রব্বানী শিপন, স্টাফ রিপোর্টার:
বেলাতখন প্রায় ১২ টা! হঠাৎ আকাশে ঘনিয়ে এল কালো মেঘ। দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ছিটেফোটা
পড়ছিল। সে সময়ে শাহজাদপুর পৌরসদরের
শাহজাদপুর থানা ও উপজেলা ভূমি অফিসের দক্ষিণের
দুটি পুকুরের মাঝস্থলের পরিত্যাক্ত একটি ভবনের
কাছে বন্ধু রিয়াজের সাথে ক্রিকেট নিয়ে গল্প
করছিল নাবিল। দশ হাত আদূরে বসে ছিল নাবিলের
বন্ধু পলিন। ঠিক সেই সময় বিকট শব্দে সেখানে
বাজ পড়ায় নাবিল ও তার বন্ধু পলিন গুরুতর আহত হয়।
এসময় এলাকাবাসী দ্রুত তাদের আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধারকরে স্থানীয় নুরজাহান হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থার অবনতি দেখে দ্রুত তাদেরপোতাজিয়াস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে এলে এলে সেখানকার চিকিৎসকেরাও
জরুরী ভিত্তিতে আহতদের এনায়েতপুর খাজা
ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে
নেয়ার পরামর্শ দিলে তাৎক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স যোগে নাবিল ওপলিনকে সেখানে নেয়া হয়। এরপর ওই হাসপাতালেদায়িত্বরত চিকিৎসক আহত নাবিল খান ও পলিনকে
পরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
কোলের মানিক সবার আদরের নাবিল ও পলিনকে
হারিয়ে ভেঙে যায় ২ পরিবারের
স্বপ্ন। নাবিল ও পলিনের অকাল মৃত্যুতে থমকে
দাঁড়িয়েছিলো শাহজাদপুর, থমকে দাঁড়িয়েছিলো
শাহজাদপুরের সকল মানুষ! আর থমকাবেই না কেন,
এলাকাবাসীর চোখের সামনেই বড় হয় তারা। করুণ
ওই মৃত্যু সংবাদ শুনে মুহুর্তের মধ্যে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ে পরিবার, আত্নীয়-স্বজন,
বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীসহ চেনা-অচেনা শত শত
মানুষ।
প্রিয়জন হারানোর শোকে ও আর্তনাদে ভারী
হয়ে উঠে গোটা পরিবেশ। দুজনের এই
অনাকাঙ্ক্ষিত অকাল মৃত্যু কেউ মেনে কেউ
মেনে নিতে পারেনি। তাদের মৃত্যুতে পুরো
শাহজাদপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পরদিন সকালে একই সাথে দুজনের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে নাবিল ওপলিনকে দাফন করা হয়। দুজনের মৃত্যু সবার মনেদাগ দিয়ে রেখে যায় এক বেদনার কাব্যকথা।
আকষ্মিকবজ্রপাতে নিহত মেধাবী কলেজ ছাত্র নাবিল খান এর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার(২৯এপ্রিল) শোকাহত পরিবারের পক্ষ থেকে
মরহুম নাবিলের নিজ বাড়িতে দিনব্যাপী
কোরআন খতম, গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণ ও
বাদ আসর বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এর
আয়োজন করা হয়। এ সময় পরিবারের আদরের
সন্তান নাবিলেরর স্মরণে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে
এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এতে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আত্নীয়জন,
বন্ধু-বান্ধব এবং পাড়া প্রতিবেশীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় নাবিলের পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ভাই
নাট্যকর্মী নাহিন খান, সাংবাদিক নিহাল খান দেশবাসীরকাছে দোয়া চেয়েছেন।
অন্যদিকে, গতকাল ২৯ এপ্রিল(সোমবার) শাহজাদপুর
উপজেলার ছয় আনিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়
এলাকার মানুষ এখনও ভুলতে পারেনি সেই দুর্ঘটনায়
তাদের প্রিয় মানুষ নাবিল ও পলিনকে অকালে
হারানোর ব্যাথা। চারদিকে কেবল কান্না আর কান্না।
নাবিল ও পলিনের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীকে উপলক্ষ
করে তাদের শোক যেন আবারো শোকের
দরিয়ায় পরিণত হয়েছে।
গতকাল গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,নাবিলের স্মৃতিচিহ্ন, ছবি বুকে নিয়ে তার বাবা মা বিলাপে মূর্ছা যাচ্ছেন। নাবিলের মৃত্যুর পর এখনো স্বাভাবিকহতে পারেননি তারা।
নাবিলের মা জানান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো নাবিল।
এছাড়াও সে খুব ভালো ক্রিকেট খেলত। বিভিন্ন
প্রতিযোগিতায় সে অনেক পুরস্কার অর্জন
করেছে। পড়ালেখায় সে ছিল মেধাবী।
নাবিলের মা আরো বলেন, প্রতিদিন ভোর হতেই
ও ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ত। এখনও নামাজ পড়ার
সময় ওর কথা খুব মনে পড়ে। তার মা এখনও ছেলের
পথ চেয়ে থাকে, বাহিরে থেকে কখন ফিরবে নাবিল। কখন মাবলে ডাকবে। বাড়িতে কোন অতিথি আসলেই তারশোক বেড়ে যায়।
দুর্ঘটনার ১ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও নাবিলের
বাবা-মার অশ্রুধারা এখনো থামেনি।
পরিবারের অতি আদরের সন্তান নাবিলকে নিয়ে তারা
অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। নাবিলের মৃত্যুর পর
থেকে বই, খাতা ও প্রাপ্ত পুরস্কারসহ যাবতীয় জিনিস
পত্র আলমারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তার বাবা মা
সবাই এসব স্মৃতিচিহ্ন দেখেন আর কান্নার সাগরে
বুক ভাসান।
নাবিলের ভাইয়েরাও দুর্ঘটনার পর আজ ভুলতে পারেনি তাদের প্রিয় আদরের ছোট ভাইকে। শুধু স্বজন
নয় তাদের জন্য কাঁদছে পুরো এলাকাবাসী।
নাবিলের স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোয়া। বড় হয়ে
দেশের সেরা ক্রিকেটার হবে। কিন্তু সেদিনের সেই
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেলো
এক নিমিষেই। বজ্রপাতে নিঃশেষ হয়ে গেলোতার
তরতাজা প্রাণ। সেই সাথে ঘটল তার স্বপ্নের চিরঅবসান।