সালে আহমেদ:
দেয়ালের হ্যাঙ্গারে ঝুলানো প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, শীতের কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়। দেয়ালে লেখা আছে ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান, প্রয়োজনীয় জিনিস এখান থেকে নিয়ে যান’। কেউ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নিজের অতিরিক্ত দুয়েকটি কাপড় এখানে রেখে যান। আবার অন্য কেউ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়োজন বোধে এখান থেকে একটি-দুটি কাপড় নিয়ে যান। এমন অভিনব উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘মানবতার দেয়াল’। মানবতার এ দেয়াল গড়ে তুলেছেন রাজধানী অদূরে ডেমরার “অালো” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষের সমস্যা লাঘবের লক্ষ্যেই গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার স্থানীয় কাউন্সিলরগণের উপস্থিতিতে পশ্চিম সারুলিয়ার বাইতুল আমান জামে মসজিদের দেয়ালে ও দক্ষিণ টেংরা হাজী রহমতউল্লাহ ফোরকানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্নে মানবতার দুইটি দেয়াল উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন। সামাজিক সংগঠন আলোর যাত্রা শুরু ২০১৬ সালে। শুরু থেকেই সংগঠনটি মানবতার কল্যাণে কাজ করে এলাকার সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে। মানবতার দেয়াল তৈরির উদ্যোগেকে সাধুবাদ জানিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলাকার লোকজন। বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন স্থান পাচ্ছে ‘মানবতার দেয়ালে’।
‘মানবতার দেয়াল’-সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জনি বলেন, ” ২০১৬ সালের ১৮ই নভেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করে “আলো”। যাত্রার শুরু থেকেই “আলো” বিভিন্ন রকম সামাজিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে রক্তদান, বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান সেবা দিয়ে আসছে। এছাড়া মানবতার দেয়ালের মাধ্যমে তারা সমাজের বিত্তশালী মানুষের সাথে নিম্ন আয়ের মানুষের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে।
তিনি অারো বলেন,আমরা হেলায় বা অলসতার কারণে কাউকে দান করতে পারি না। আবার কাকে দিব? দিতে গেলে সে নেয় কি না? কাপড়টা দিয়ে তাকে ছোট করা হবে কি না? এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের মনে আসে। কিন্তু যদি এটাকে এমন একটা জায়গায় রাখা যায় তাহলে সেখানে সবাই নিজের ইচ্ছামতো অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবে আবার প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস নিতেও পারবে। এখানে কাউকে কারো মুখোমুখি হতে হবে না।
সোহাগ হোসেন নামে এক দিনমজুর বলেন, মার্কেটে থেকে একটি শার্ট প্যান্ট কিনতে গেলে ৪০০-৫০০ টাকা লাগে। মানবতার দেয়ালের কারণে এমনিতেই পেয়ে গেলাম। এটা আমার জন্য অনেক বেশি উপকার হয়েছে।
মামুনুর রহমান নামের টেংরার এক বাসিন্দা বলেন, আমি যেগুলা পড়তে পারি না, আমি সেগুলো এখানে দিয়ে যাব।সমাজের অসহায় বঞ্চিত লোকটা বস্ত্রটা পেলেই স্বার্থক।
আলোর আরেক সদস্য জানান, কারো কাছে হাত পেতে নিবে কিছু, কিন্ত লজ্জায় চাইতে পারছে না, তাই এই ধরণের প্রয়োজনটা যেন তারা সহজেই পূরণ করতে পারে, সে জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।
অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মানবতার দেয়াল’। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে খুব দ্রুতই ভাইরাল হয়েছে ‘মানবতার দেয়াল।
আরো পড়ুন: