এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী:: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার (২১শে ফেব্রুয়ারি) তরমুজ চাষিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অস্থায়ী ঢং ঘর থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এবং সেই মালামাল উদ্ধার সহ এলাকার বাসিন্দারা ডাকাতদের চিহ্নিত করলেও তারা এখন অলৌকিক ভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে চলাফেরা করে বেড়াচ্ছেন। এতে প্রশাসন কিংবা চেয়ারম্যানের যেন নেই কোনও মাথা ব্যাথা।
গত মঙ্গলবার(২১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত গভীর রাতে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলার হাট থানার নুরাবাদ ইউনিয়ন থেকে তরমুজ চাষ করতে আাসা নুর হোসেন (৩২) প্রোজেক্ট মালিক এর ডেরা বাসায় (ঢং ঘর) এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আর এ ডাকাতদের ও ডাকাতির মুল হোতা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল বাশার মৃধা (৫০)। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত তুজুমবর আলী মৃধার ছেলে।
অন্যান্য ডাকাতরা হলেন, মো: নিজাম ফকির (৪০), মো: আল-আমীন (২৫), মো: হাবি হাওলাদার (৫৫), মো: বাবুল সরদার (৪৭), মো: দেলোয়ার গাজী (৪২), মো: লিটন সরদার (৪০), মো: বাবুল (২৮) ও মো: রিয়াজ (২৭)।
ডাকাতির সময় ডেরা বাসায় (ঢং ঘর) মোতালেব (৪৬), বেল্লাল (৪০), জোটন (৩২), বাচ্চু (২৫) ও সেলিম (৩৫) কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত পা বেধে ৪৮ বস্তা সার, ৩০ কেজি ওজনের দুইটি এলপি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার, তিনটি ছোট ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার, একটি চুলা, ৬ বস্তা চাউল, এক ব্রেল ডিজেল, দুইটি পানির পাম্প, একটি ৫০ ওয়াডের সোলার প্যানেল, ও ৬০ ওয়াড ব্যাটারি, দুইটি হাত গড়ি, একটি টর্চ লাইট, ১৬টি ধান কাটার কাস্তে, দুটি স্মার্ট ফোন, তিনটি বাটন ফোন, ১০ লিটার সয়াবিন তৈল ও নগদ ২১৭০ টাকা সহ প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
তরমুজ চাষি মোতালেব ও বাচ্চু বলেন, ১০-১২ জনের ডাকাত দল রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ট্রলার নিয়ে, আমাদের বাসায় এসেই অমানবিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর আমাদের মোবাইল ফোন ও টাকাসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
চাষিরা বলেন, আমরা ডাকাতদের চিনতে পারিনি। তবে ঘটনার পর দিন বেলা ১২টার দিকে স্থানীয় সিদ্দিক খান আমাদেরকে ফোনে বলেন চরমিয়াজানের বউ বাজার এলাকায় একটি সার ভর্তি ট্রলার পাওয়া গেছে। সেখানে গিয়ে দেখি সারের বস্তা গুলোতে কাদা মাটি মাখানো এবং পানির পাম্পের তলা পরে আছে সেগুলো দেখে, আমরা চিনতে পেরেছি যে এগুলো ডাকাতি হওয়া আমাদের মালামালের অংশ।
এদিকে জানাজানির এক পর্যায় ডাকাতি চক্রের সরদার নিজাম ফকির সত্যতা স্বীকার করেন। এবং ডাকাতির মূল হোতা বাশার মৃধা মুঠো ফোনে ডাকাতির বিষয়টি অস্বীকার করেন ও দেখা করবেন বলে মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
ডাকাত দলের অন্য সদস্য ট্রলার মালিক আল- আমিন স্থানীয় সালিস বৈঠকে চেয়ারম্যান এনামুল হক চাপ প্রয়োগ করলে বলেন, ডাকাতের সরদার নিজাম ফকির ও দেলোয়ার আমার ট্রলার সহ আমাকে গুম করার হুমকি দিলে আমি স্থানীয় বাশার মেম্বারকে জানাই পরে তিনি আমাকে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করায় বলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৩৫) জানান, এই ডাকাত দল ভোলা ও বাউফলের আতঙ্ক, এরা মহাসিন গ্রুপের লোক। এলাকায় এদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না এরা দ্বীপের ত্রাস। ডাকাতি হওয়া সকল মালামাল সহ ডাকাতদের শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সালিশ বৈঠকে তারা তা স্বীকারও করেছেন। তবে বাশার মেম্বার স্থানীয় ইয়াকুব আলী ও বসার বয়াতি কে তার বাসায় নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার কথা বলে ওই সময়ে বাশার মেম্বার ও ইয়াকুব আলী এর কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপে বাশার মৃধাকে বলতে শোনা যায়, তোরা আমার আপনজন তোরা এ-ই বিষয় টা জানাজানি করিস না তাহলে আমার মান সম্মান থাকে না এর চেয়ে আমার গলা কেটে চলে যা।
ভুক্তভোগী নুর হোসেন জানান, চিহ্নিত ডাকাতরা পরিপূর্ণ মালামাল না দিলে গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলে ২৮শে ফেব্রুয়ারি থানা পুলিশের একটি টিম তদন্তে আসে ঘটনাস্থলে। কিন্তু থানা পুলিশের কেমন যেন গড়িমসি চলছে। আমরা দুর থেকে এসে তরমুজ চাষ করি পরিপূর্ণ টাকা দিয়ে এবং আমাদের এখানে কর্মসংস্থান হয় অনেকের। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত আমরা তরমুজ চাষিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এতো বড় একটা ডাকাতি হলো, মালামাল উদ্ধার সহ ডাকাতরা চিহ্নিত হলো জনগণের কাছে কিন্তু এখনো কোনও সুরহা পাচ্ছি না।
এদিকে নাম না বলা শর্তে একাধিকরা জানান, চেয়ারম্যানের তৎপরতায় থানা পুলিশ নিশ্চুপ। পাশাপাশি চিহ্নিত ডাকাতরা এলাকায় বেপরোয়া ও প্রকাশ্যদিবালোকে চলাফেরা করছে এবং বলছে আমাদের মাথার উপর ছায়া আছে। কই কেউইতো আমাদের কিছুই করতে পারেনি বা পারলোনা এবং পারবেওনা। এখন মামলায় মাথার ছায়ার নির্দেশে বাশার মেম্বারের নাম বাদ দেওয়ার পায়তারা চলছে।
চেয়ারম্যান এনামুল হক এবিষয়ে বলেন, ডাকাতরা এলাকায় নেই। আমার জানামতে তারা পলাতক এবং ডাকাতরা আমার এন্ট্রি কোরামের। তাদের ব্যাপারে আমি সজাগ রয়েছি। আর চাষিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বাউফল থানার ওসি আল মামুন বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থালে পাঠানো হয়েছিল এবং এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা চলছে।
আরো পড়ুন: