দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতার
কার্যালয়ই সকল অপকর্মের আখড়া
*এ কার্যালয়েই গার্মেন্টকর্মী গণধর্ষণের শিকার হলেও আসামী করা হয়নি যুবলীগ নেতাকে*
আবুল খায়েরঃ
কুমিল্লা দাউদকান্দিতে শরীফ উল্লাহ নামে এক যুবলীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয় সকল অপকর্মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার মালিখিল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যুবলীগ নেতার ধর্ষণ, মাদক, জুয়া, দেন, দরবার এবং বিচারের নামে প্রহসণসহ সকল অপকর্মই সংগঠিত হয়। সবশেষ গত শুক্রবার যুবলীগ নেতার এ কার্যালয়েই এক গার্মেন্টকর্মী গণধর্ষণের শিকার হয়। এ দিকে আলোচিত এ যুবলীগ নেতার কার্যালয়ে গণধর্ষনের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর যুবলীগ নেতা শরীফ উল্লাহ গাঁ ঢাকা দিয়েছে। তবে ধর্ষণ মামলায় তাকে অভিযুক্ত না করায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি নির্বাচিত হন উপজেলার মালিখিল গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদউল্লার ছেলে শরীফ উল্লাহ। যুবলীগ সভাপতির পদ পেয়েই সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে মালিখিল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সওজের ফোর লেনের সরকারি জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত একটি কার্যালয় স্থাপন করে শরীফ। স্থানীয়রা জানায়, এ যুবলীগ নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়কে ঘিরেই ওই এলাকার সকল অপকর্ম সংগঠিত হয়ে আসছে। এ কার্যালয়ে মাদক, জুয়া, বিচারের নামে প্রহসনসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ সংগঠিত হয়। এলাকার বখাটে, মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীসহ অসৎ লোকগুলোর আড্ডার কেন্দ্রস্থল এ কার্যালয়। সচেতন মহল এ কার্যালয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসলেও প্রভাবশালী যুবলীগ নেতার দাপটের কাছে তা বেশীক্ষন টিকে থাকতে পারেনি। সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ছবি এবং কার্যালয়ে বাইরে নৌকা প্রতিক টানিয়ে যুবলীগ নেতা শরীফ উল্লাহ এ অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালী এবং বখাটে চক্রের কারণে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে পারেনি। সবশেষ গত ৭ জুলাই বিয়ের আলোচনার আশ^াস দিয়ে উপজেলার মালিখিল গ্রামের বখাটে যুবক রাব্বি চট্টগ্রাম থেকে তারই প্রেমিকা এক গার্মেন্টস কর্মীকে ফুসলিয়ে এলাকায় আনে। ওই তরুনীকে ছলে বলে যুবলীগের সভাপতির কার্যালয়ে নেয়া হয়। রাতভর ওই তরনীকে পাশবিক নির্যাতন ও মুখে উড়না পেচিয়ে ৫-৬ জন মিলে গণধর্ষণ করা হয়। ভোরে ওই তরুনীর হাতের মোবাইলটি রেখে তাকে তাড়িয়ে দেয় ধর্ষক চক্র। স্থানীয় একজনের সহযোগিতায় ধর্ষিতা দাউদকান্দি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে এসে অভিযোগ দাখিল করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের সময় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ধর্ষক গোলাম রাব্বি, আল আমিন, রাব্বি আহাম্মেদকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু যুবলীগ নেতার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার কিংবা মামলায় আসামী না করায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে যুবলীগ সভাপতি শরীফ উল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়, আমার কার্যালয়ে কোন মাদক, জুয়া, বিচারের নামে কোন অপকর্ম কিংবা অসামাজিক কার্যকলাপ হয়না, আমার কার্যালয়ের পিয়ন ফাহিমের সাথে প্রতারণা করে অফিসের চাবি নিয়ে তারা এ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি ধর্ষক আল আমিনকে গ্রেফতারে পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম সহাসড়কের পাশে সরকারি জায়গা দখল করে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শরীফ উল্লাহ শরীফ এ কার্যালয় স্থাপন করে দীর্ঘদিন যাবত নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে বলে এলাকার বহুলোক আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, যুবলীগ নেতা শরীফ উল্লাহ প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জায়গায় একটি কার্যালয় স্থাপন করেছে বলে আমরা জেনেছি, কিন্তু ধর্ষণের ঘটনা তদন্ত করে এ ঘটনার সাথে যুবলীগ নেতা শরীফ উল্লার কোন সংশ্লিস্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।