মহিন উদ্দিনঃ চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দর থানার নিমতলার বুচুইক্ক্যা কলোনির একটি বাসা থেকে শনিবার সকালে আবু তাহের (৩৫) ও তার চার বছর বয়েসী মেয়ে ফাতেমা খাতুনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রতিবেশী মাইনুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ দেখে ফেলায় মা হাসিনা বেগম নিজ হাতে খুন করেন চার বছর বয়েসী সন্তান ফাতেমাকে। পরে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে মিলে ফাতেমা শ্বাসরোধের পর ছুরিকাঘাতে খুন করেন স্বামী আবু তাহেরকে।
চট্টগ্রামে নিজ বাসায় বাবা-মেয়ে খুনের ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানিয়েছে এ তথ্য।
এ ঘটনায় তাহেরের বড় ভাই নুর আলম বাদি হয়ে তাহেরের স্ত্রী হাসিনা ও প্রতিবেশী মাইনুদ্দীনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করেন।
লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে রাতে গ্রেপ্তার দেখায়। আর ভোর রাতে নোয়াখালী সদর উপজেলা থেকে মাইনুদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, “লাশ উদ্ধারের পর হাসিনা পুলিশকে জানায় তাহের তার মেয়েকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
“এর এক পর্যায়ে হাসিনা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে বিস্তারিত প্রকাশ করে।”
পুলিশ জানায়, যে বাসাটিতে তাহের তার পরিবার নিয়ে থাকতেন তার পাশের কক্ষে ভাড়া থাকতেন মাইনুদ্দীন। বোর্ড দিয়েই একটি কক্ষকে দুই ভাগ করা হয়েছিল, যার একটিতে মাইনুদ্দীন ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আমেনা বলেন, “শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাহের বাসা থেকে বের হওয়ার পর মাইনুদ্দীনের সাথে হাসিনার ‘শারিরীক সম্পর্ক’ শিশু ফাতেমা দেখে ফেলে এবং বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বলে। এসময় মাইনুদ্দীন ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরে আর হাসিনা ছুরি দিয়ে হত্যা করে লাশ খাটের উপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়।
“কিছুক্ষণ পর তাহের বাসায় প্রবেশ করলে মাইনুদ্দীন ও হাসিনা তাকে জাপটে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ এবং পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে ফেলে।”
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) কামরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসিনা নিজেই মেয়েকে খুন করার পাশাপাশি মাইনুদ্দীনকে নিয়ে স্বামী তাহেরকে ছুরিকাঘাত খুন করার কথা স্বীকার করেছেন।
“হাসিনা জানিয়েছে মাইনুদ্দীনের সঙ্গে তার ‘শারিরীক সম্পর্কের’ বিষয়টি শিশু ফাতেমা দেখে ফেলার পর মাইনুদ্দীন বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা বললেও হাসিনাই মেয়েকে মেরে ফেলার কথা বলে এবং নিজে খুন করে।”
তাহের ও হাসিনা দুইজনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল। তাহেরের আগের স্ত্রী মারা গেছেন। আর হাসিনার সাথে তার স্বামীর বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়েছিল।
বিচ্ছেদের পর নিমতলী এলাকায় বড় বোনের বাসায় থাকার সময় পাঁচ বছর আগে তাহেরের সাথে হাসিনার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আর মাইনুদ্দীনের স্ত্রী তার নোয়াখালীর বাড়িতে থাকেন।
মাইনুদ্দীন এসএপিএল কন্টেইনার ডিপোতে শ্রমিকদের মাঝি (শ্রমিক সরবরাহকারী) হিসেবে কাজ করেন। আর তাহের ওই কন্টেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন।