March 23, 2023, 8:58 pm

#
ব্রেকিং নিউজঃ
বুড়িচংয়ে সম্পত্তি বিরোধের জেরে ৫জনকে কুপিয়ে জখম; মামলা তুলে নিতে হুমকি।মহেশপুরে পুত্রের লাঠির আঘাতে পিতার মৃত্যু.জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হলেন সাদিয়া ইসলাম: নড়াইল সদর।কুমিল্লায় নব-গঠিত কৃষক দলের আহবায়ক কমিটির পরিচয় সভা অনুষ্ঠিত।বাউফলে ডাকাত চিহ্নিত, মালামাল উদ্ধার হলেও প্রকাশ্যে ডাকাতদের চলাফেরা।ইশ্বরগঞ্জে ঘুমন্ত মা কে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক ছেলে আটক।কুমিল্লা মহানগর জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি গঠন।কুমিল্লায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সময়ের আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন।কুমিল্লা আর্দশ সদর উপজেলার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।বরুড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচন অফিস ভাঙচুর।

“একনজরে বাউলসম্রাট লালন সাঁই “

“একনজরে
বাউলসম্রাট লালন সাঁই ”

-রিয়াজ শাওন

তিনি বাঙালী বাউলসম্রাট,
তিনি সমাজ সংস্কারক,
তিনি মানবতাবাদী,
তিনি দার্শনিক,

তিনিই লালন ফকির,
তিনিই লালন সাঁই,
তিনিই লালন শাহ,
তিনিই মহাত্মা লালন,
ভক্তদের কাছে তিনি নানা নামে পরিচিত।

“জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সব দেখি তা না না না।” – লালন

তার জীবনশায় ২৮৮ টি গান রচনা এবং সুর করেছেন। কিন্তু কি আজব বেপ্যার তার জীবন সম্পর্কে কোন তথ্য রেখে যাননি। অনুসারীরা তার জীবন সম্পর্কে কোন তথ্য যানতে চাওয়া ছিলো বারন তাই তার সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য যানা যায়নি । তবে তার মৃত্যু ১৫ দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত “হিতকরী ” প্রত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে লিখেছিন

““ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না।”

লালনের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। লালন নিজে কখনো তা প্রকাশ করেননি। কিছু সূত্রে পাওয়া যায় লালন ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান
বাংলাদেশের ) ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন।

এই মতের সাথেও অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। বাংলা ১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহম্মদী পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে বলে উল্লেখ করা হয়।

তারজন্ম রহ্যস তিনিই যানেন। তবে
তিনি জন্মেছেন ১৭৭৪ খ্রিঃ অবিভক্ত বাংলায়।
এটাকেই সঠিক বলে অনুমান করার হয়।

এইদিকে “হিতকরী” পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিবন্ধে বলা হয়েছে “লালন তরুণ বয়সে একবার তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন তার সাথিরা তাঁকে মৃত ভেবে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়।

কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তাঁর স্ত্রী মতিজান তাঁকে বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর লালন তাঁর কাছে দীক্ষিত হন এবং কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস শুরু করেন। গুটিবসন্ত রোগে একটি চোখ হারান লালন।
ছেউড়িয়াতে তিনি দার্শনিক গায়ক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাতে আসেন এবং তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হন। এছাড়া লালন সংসারী ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর সামান্য কিছু জমি ও ঘরবাড়ি ছিল। লালন অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে অশ্বারোহণের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যেতেন।”
“সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না এই নজরে।
কেউ মালায় কেউ তসবি গলায়,
তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায়।
যাওয়া কিম্বা আসার বেলায়,
জাতের চিহ্ন রয় কার রে “

লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক।
ফলে তিনি ধর্ম, বর্ণ,গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন।
অসাম্প্রদায়িক এই মনোভাব থেকেই তিনি তাঁর গান রচনা করেছেন।

তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার , সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘বাউল-সম্রাট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তাঁর গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

তিনি আত্মত্ব, দেহতত্ত্ব, গুরুতত্ত্ব, সাধতত্ত্ব, মুর্শিদতত্ত্ব, প্রেম-ভক্তিতত্ত্ব,সাধনতত্ব,মানুষ-পরমতত্ত্ব, আল্লাহ্-নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণ-গৌরতত্ত্ব উপর নাম লিখতেন।

তার দেহ তত্ত্বঃ-

“আট কুঠুরী নয় দরজা আঁটা
মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাঁটা।
তার উপরে সদর কোঠা
আয়না মহল তায়”

তার ধর্ম নিয়ে রয়েছে সব থেকে বেশি গোলক ধাঁধাঁ। তিনি কি হিন্দু ছিলেন? না কি মুসলিম ছিলেন? সেটা কিন্তু আজও অজানা । লালন ফকির তার গানে প্রশ্ন করেন

‘‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে।
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান
জাতি গোত্র নাহি রবে।।”

অন্য দিক তার কিছু অনুসারী মনে করেন
“তিনি ছিলেন ওহেদানিয়াত নামক একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদের অনুসারী। ওহেদানিয়াতের মাঝে বৌদ্ধধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, সুফিবাদসহ আরও অনেক ধর্মীয় মতবাদ বিদ্যমান। ”

মৃত্যুরপর তাকে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার ছেউড়িয়াতে সমাহিত করা হয়।
বর্তমানে এইখানেই তার মাজার রয়েছে। আজও সারা বাংলর বাউল শিল্পীরা অক্টোবর মাসে” লালন উৎসব ” নামে অনুষ্ঠানে এইখানে মিলিত হয়। তার ভক্তর সংখ্যা মোটেও কম নয় প্রায় ২০ হাজারেরও অধিক।

তাকে নিয়ে অনেক সিনেমাও নাটক তৈরি হয়েছে। গল্প কবিত ও লিখা হয়েছে।
তাঁর গান ও দর্শন যুগে যুগে প্রভাবিত করেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,কাজী নজরুল ও অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষকে তার গানে প্রভাবিত হয়েছে।

তিনি বাঙালি বহু প্রতিভার অধিকারী একজন বাউল সাধক ছিলেন। আসলেই লালন শাহ ছিলেন রহ্যস ঘেরা মানুষ। তার গানেও রয়েছে অন্য রহ্যস।

তিনি ২ হাজারো বেশি গান রচনা করেন। তাকে
গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, তাঁকে ‘মহাত্মা ’ উপাধি।

তিনি মৃত্যুবরন করেন ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে
ছেউড়িয়া, কুমারখালী,কুষ্টিয়া, অবিভক্ত বাংলা।
তার মৃত্যুর কারণ “বার্ধক্য”।

লেখকঃ রিয়াজ শাওন
বির্তাকীক,চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

#

     আরো পড়ুন:

পুরাতন খবরঃ

শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১