ঈগল গ্রুপ’ কুমিল্লার আতংক
কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লায় এক আতংকের নাম ঈগল গ্রুপ
ঈগল গ্রুপ আতংক কাটেনি এখনও।
ভয়ে ও আতংকে আছে কুমিল্লা নগরীর মোগটুলী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ। বিশেষ করে স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবক।
গত এক বছরে ঈগল গ্রুপের সদস্যদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়েছে মিরন ও আদিল। নির্যাতন, হামলা ও আহত হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে রয়েছে স্কুলছাত্র, তাদের অভিভাবক, ব্যবসায়ী ও মোগলটুলী এলাকা এবং কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। সর্বশেষ গত ১৩ মে রাতে নগরীর মোগলটুলীতে আজমাইন আদিল খুনের পর একে একে বেরিয়ে আসছে ঈগল গ্রুপ নামক কিশোর গ্যাং এর ভয়াবহতার খবর।
মোগলটুলী ও স্কুল কলেজের দেয়াল ও গেইটে রয়েছে ঈগল গ্রুপের নাম, লগো ও বিভিন্ন স্লোগান। এর মধ্যে ‘ র্বন টু ফ্লাই’ জন্ম উড়ার জন্য। ঈগল কখনো শিকার হয় না, শিকার করার জন্য জন্মায় অন্যতম।
বিভিন্ন স্কুল ছাত্রই ছিল ঈগল গ্রুপের প্রধান টার্গেট। কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলীতে জন্ম নেয়া ইগল গ্রুপ স্বল্প সময়ে আলোচিত হয়ে উঠে কুমিল্লা জুড়ে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঈগল গ্রুপের জন্ম মোগলটুলীতে। কুমিল্লা নগরীর কয়েকটি স্কুলের ১০ থেকে ১২ জন ছাত্র ও অছাত্র কিছু যুবকের উদ্যেগে।
নগরীর মোগলটুলীর মুহিদ সাদির উদ্যেগে গঠিত হয় ঈগল গ্রুপ। তার অন্যতম সহযোগি একই এলাকার অনিক, জাহিদ, খায়রুল ও আদর। এ গ্রুপে রয়েছে প্রায় তিন শতাধীক সদস্য। এর মধ্যে বিভিন্ন স্কুলের ৭ম ৮ম ও ৯ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীই বেশি। গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা। রয়েছে অছাত্র ও নিয়ে ও নানান পেশায় কর্মরত যুবক।
এদের মধ্য থেকে পাঁচজনই প্রত্যক্ষভাবে আদিল হত্যায় জড়িত। হঠাৎই জন্ম নেয়া ঈগল গ্রুপ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতংকে আছে কুমিল্লা নগরীর স্কুলপড়–য়াদের অভিবাবকরা।
আদিল খুনের পর বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাদি ও অনিকের সিদ্ধান্ত ছিল ইগল গ্রুপ পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন স্কুল ছাত্রকে টার্গেট করা। প্রথমে গ্রুপের জন্য চাঁদা চাওয়া হবে। এজন্য কাজ করবে ঈগলের অন্য একটি গ্রুপ, চাঁদা না পেলে ওই স্কুল ছাত্রের কাছে থাকা মোবাইল ও অন্য দামি যে কোন জিনিস জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে আসা।
কোন স্কুলছাত্রকে হামলা বা মারধর করতে হলে এর জন্য তৈরি থাকবে আরেকটি গ্রুপ যার নেতৃত্বে থাকবে মুহিদ সাদি, জাহিদ ও আদর। যে কাউকে মারধরে অংশ নিবে অছাত্র ও বখাটে যুবকের দল।
এমন ভয়াবহতা নিয়েই দীর্ঘ ১ বছর নৃশংসতা চালাচ্ছিলো ঈগল গ্রুপ। পায়ূ পথে ছুরিকাঘাত করে সাদির অপরাধ শুরু। গত বছর মোগলটুলী এলাকার ১৩/১৪ বছরের এক ছেলেকে পায়ূপথে ছুরি দিয়ে আঘাত করে মুহিদ সাদি। এর পর থেকেই তার অপরাধ শুরু। চলতে থাকে একের পর এক অপরাধী কর্মকান্ডের ঘটনা। পশ্রয় দিতে থাকে স্বতন্ত্র ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ও কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবীদ অভিভাবক। যাদের আশ্রয়-পশ্রয়ে সাদি, অনিক, খায়রুল, জাহিদ ও আদররা হয়ে উঠে ভয়ানক খুনি। একে একে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটায় ঈগল গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। মডার্ণ স্কুলের দুই ছাত্র পর পর খুন হয় এক মাসে। ১৬ এপ্রিল ছুরিকাঘাতে আহত হয় কালেক্ট্রোরিয়েট স্কুলের মারুফ ও তৌকি, চলতি বছরের জানুয়ারির দিকে কাপ্তানবাজার এলাকার সাংবাদিক বাহার রায়হানের ভাতিজা তন্ময়, আদালত পাড়ার পেয়ার মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ, মোগলটুলীর চাল ব্যবসায়ী গাজী মিয়াসহ এই গ্রুপের সদস্যদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেকে। এর প্রতিকার চায় সকলে।