আব্বুকে ফোন দাও, বল চিপস নিয়ে আসতে ছোট্ট জোনাকীর বায়না
মনোহরগঞ্জ য্বুদলের নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
হত্যার মামলায় ৬ দিন অতিবাহিতঃ পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
জোনাকী বয়স (৪) ছলছলে চোখে তাকিয়ে রয়। আব্বু দোকানে গেছে আসার সময় চিপস, চকলেট নিয়ে আসবে। না এলে মুখে নিবে না কিছু। এমন বায়না জোনাকীর। জোনাকী এখনও বুজে উঠতে পারছে না তার বাবা আর আসবে না । চিরতরে তাকে ছেড়ে চলে গেছে পরপাড়ে। ছোট্ট এই জোনাকী, জান্নাতুল ফেরদাউস’র জন্য স্থানীয় একটি দোকানে চিপস আনতে গিয়ে মুখশ বান্ধা ১০/১৫ জন যুবক পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন জয়নাল আবদীন হাজারী (৩৫) কে। গত মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরশপুর ইউনিয়নে ভাউপুর গ্রামে তার দাফন হয়েছে। বাপের দাফনের পর থেকেই বাবার ছবি সর্বক্ষন বাকঁছে জোনাকীর সামনে। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি। সে জানে, তার বাবা এখনও দোকানে আছে। চলে আসবে কিন্তু কেন আসছে না- নিকট আত্মীয়দের কাছে এমন প্রশ্ন বারবার ছুড়ে দিচ্ছে ফুটফুটে জোনাকী। স্বজনদের কাছে বায়না ধরছে আব্বুকে ফোন দাও বল চিপস নিয়ে আসতে না হলে আমি খাবো না। বাবার কথা মনে পড়লে কান্নায় আর থামছে না জোনাকী ও তার বড় বোনে জান্নাতের। বাবার কথা ভুলিয়ে রাখতে মা ও স্বজনের পাশাপাশি এলাকাবাসীসহ হিমশিম খেতে হচ্ছে। বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস (৮) খেলার ছলে ছোট বোনটিকে বাবার কথা ভুলিয়ে রাখতে চাইসে সে। গতকাল রবিবার সরশপুর ইউনিয়নে ভাউপুর গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। দিনে খেলার ছলে জোনাকীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখলেও রাতে আর রক্ষা নেই। ঘুমের সময় হলে কান্নাকাটি শুরু বাবার বুকে শুয়ে ঘুমাতো সবার আদরের জোনাকী। এ কারণে ঘুম ফেলে বাবার জন্য অস্থির হয়ে যায়। ছলছল চোখে তাকিয়ে রয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস ও ৬ মাস বয়সী তানজির আহমেদ।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের ভাউপুর গ্রামে যুবদল নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারীকে গত রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় সন্তানের জন্য চিপস আনতে স্থানীয় দোকানে গেলে ১০/১৫ জন দুস্কৃতিকারী ওই যুবদল নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। আত্মরক্ষার্থে জয়নাল দৌঁড়ে ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিনের কুটিবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলেও দুস্কৃতিকারী পূনঃরায় তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় তাকে রক্ষার্থে ওইবাড়ির সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী শিউলি বেগম এগিয়ে এলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত জয়নালকে প্রথমে সোনাইমুড়ি সদর হাসপাতালে ও পরে কুমিল্লা হাসপাতালে নেয়া হয়। ওইদিন রাতেই আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ জুলাই সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
নিহত জয়নাল উপজেলার সরসপুর ইউনিয়নের ভাউপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি। তাঁর স্ত্রীসহ জান্নাতুল ফেরদাউস ঝুমুর (৮), জোনাকি (৪) ও ৬ মাস বয়সী তানজির আহমেদ নামে ৩ সন্তান রয়েছে।
৩১ জুলাই জয়নালের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার মুন্নী বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত জয়নাল আবদীন ছেলে নুরুল আমিন (৫৫), মৃত আবদুল ছালাম ছেলে মনির হোসেন (৪২), আবদুল্লাহ (২৮) মৃত নুরুল আমিনের ছেলে আবদুল্লাহ (২০), মৃত আবদুছ ছালামের ছেলে আবদুল হালিম (২৫), সাব্বির (২৩), নুরুল আমিনের ছেলে মাসুদ আলম (২৬) ও মনির হোসেনের ছেলে রিয়াদ (১৯) অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।
নিহত জয়নালের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার মুন্নি বলেন, সন্তানের বায়না তাকে আরও কষ্ট দেয়। যতক্ষন পারছে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখছে, না পারলে চোখের পানি মুছতে শুরু করে। ঝুমুর, জোনাকী ও ৬ মাস বয়সী তানজির আহমেদ আমার সন্তান। আমি জানি আমার স্বামীকে ওরা বিনাদোষে মেরে ফেলেছে। ঝুমুর ও জোনাকী জানে না আর কোনদিন তার বাবাকে কাছে পাবেনা। খুব কষ্ট হচ্ছে, সারাজীবন এ কষ্ট থাকবে আমার জীবনে। আমার সন্তান তানবির ৪ দিন ধরে খুব অসুস্থ্য এলাকার ডাক্তার এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারতিছি না। আসামীরা বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি ধমকি দিতেছে ঘর থেকে বের হলে আমার সন্তানদেরকে মেরে ফেলবে।
নিহতের বোন নিলুফা বেগম, কান্নাজড়িত কন্ঠে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, মামলা করার পর এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। উল্টা আসামীর লোকজন বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এমনকি প্রাণে মারার হুমকি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন ভ’ঁইয়া বলেন, কুমিল্লা কোর্টে মামলা হয়েছে। কপি পেয়েছি, তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে।